
তরিকুল ইসলাম নিজস্ব প্রতিবেদক,
দলীয় কার্যালয় বানানোর কথা বলে একটি টিনের ঘর দিয়ে শুরু করলেও পরে স্কুলের ভিতরেই জোরপূর্বক তিনতলা একটি বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। ভবনটি স্কুলের মাঝখানে হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। দ্রুত বিল্ডিংটি উচ্ছেদ করে স্কুলের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর। অভিযুক্ত আব্দুল বাতেন চরতারাপুরের নতুন বাজার এলাকার আব্দুল মাজেদের ছেলে ও ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা। তবে আগে তিনি ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অন্যদিকে তার আরেক পরিচয় হলো চরতারাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর চাচাতো ভাই। সরজমিন স্কুলে দেখা যায়, শুনশান নীরবতার মধ্যে চলছে স্কুলের পাঠদান। এরই মধ্যে দেখা মেলে শহীদ মিনার ঘেঁষে স্কুলের ঠিক মাঝখানে তিনতলা একটি বিল্ডিং বাড়ি। বাড়ির পূর্বে স্কুলের একটি টিনের ঘর, পশ্চিমে আরেকটি টিনের ঘরে গাদাগাদি করে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। বাড়িতে প্রবেশের পথও স্কুলের ভিতর দিয়ে করা হয়েছে। এজন্য স্কুলের গেটও করতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। এলাকাবাসী জানায়, পাবনা সদরের চরতারাপুর ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত নতুন বাজার উচ্চ বিদ্যালয়টি ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। ২০১০ সালের দিকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ-যুবলীগের অফিস করার কথা বলে স্কুলের ভিতরে একটি টিনের ঘর তোলেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। এ সময় স্থানীয়রা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বাধা দিলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। শিক্ষকরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ নিয়ে গেলেও স্থানীয় এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ মোশাররফ হোসেনের জন্য অভিযোগ আমলে নিতে পারেনি কর্মকর্তারা। এরপর যারাই প্রতিবাদ করেছে নানা ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকির শিকার হয়েছেন। শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত ও হত্যার হুমকিও দেয়া হতো। এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তিনি এসব করে গেছেন। তবে ৫ই আগস্টের পর থেকে তিনি পলাতক। দ্রুত বাড়িটি অপসারণ করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান তারা। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলের মাঝখানে বাড়িটি করা হয়েছে। ফলে বিদ্যালয়ে কোনো দিবসের অনুষ্ঠান করতে পারি না। এছাড়া ময়লা-আবর্জনা উপর থেকে ফেলানো হলে দুর্গন্ধে স্কুলের মাঠে থাকা যায় না। স্কুলের সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসাইন বলেন, বাড়িটির জন্য আমরা চরমভাবে বিব্রত হচ্ছি।
লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘ্ন হচ্ছে। এজন্য বাড়িটি দ্রুত অপসারণ করতে হবে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, জোরপুর্বক ক্ষমতার জোরে বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত এটি অপসারণ করে পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি বাড়ির মালিককে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি আসার আগেই ২০১৩ সালের দিকে সাবেক প্রধান শিক্ষক শামসুর রহমান ও সাবেক সভাপতি শামসুল আলমের আমলে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। বাড়িটি নির্মাণের পর থেকেই ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস, এসিল্যান্ডসহ পাঁচটি অফিসে জমির কাগজপত্রসহ অভিযোগপত্র জমা দেই, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তিনি আরও বলেন, গত কয়েকদিন আগেও কয়েকটি অফিসে ধরনা দিয়েছি বাড়িটি উচ্ছেদের জন্য। বাড়িটি অপসারণ করে প্রকৃত পরিবেশ ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান তিনি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত বাতেন বলেন, বিদ্যালয়ের জমিদাতা থেকে আমি ৪ শতাংশের একটু কম জমি কিনেছিলাম। সেই জায়গার উপর বাড়ি করেছি। তবে জায়গা কত সালে কিনেছেন সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান। তবে সূত্র জানায়, ২০২২ সালের দিকে এই জায়গা স্কুলে জমিদাতার কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে রেজিস্ট্রি করে নেয়া হয়। পাবনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে ব্যক্তিগত বাড়ি হতে পারে না। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটিতে বিষয়টি তদন্ত করতে বলেছি। এরপর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানা তিনি।